Blog details

  • Home
  • কানের শো শো শব্দ বা টিনিটাস এর চিকিৎসা পদ্ধতি
image

কানের শো শো শব্দ বা টিনিটাস এর চিকিৎসা পদ্ধতি

শরিফ সাহেব একটি প্রাইভেট কোম্পানিতে চাকরি করেন। খুবই স্বাস্থ্যসচেতন কিন্তু ইদানিং একটি সমস্যা তাকে খুব ভোগাচ্ছে। তিনি কানে শো শো শব্দ শুনতে পান যা তার কাজে মনোনিবেশ করতে সমস্যা হচ্ছে, এমনকি রাতে যখন ঘুমোতে যান চারদিক নীরব হয়ে যায় তখন তা আরো তীব্র আকার ধারণ করছে। এর ফলে তিনি রাতে ঠিকমতো ঘুমাতে পারছেন না ।

শরিফ সাহেব এর মতন অনেকেই এ ধরনের সমস্যা নিয়ে আমাদের নিকট আসেন ।উপরোক্ত সমস্যাটি ডাক্তারি পরিভাষায় টিনিটাস নামে পরিচিত যার অর্থ রিং। ইহা কোন রোগ নয়, কানের বা শরীরের অন্য কোন রোগের উপসর্গ মাত্র যা রোগী নিজ কানে অনুভব করে ।বাইরের কোন শব্দ ব্যতীত নিজ কানে এক ধরনের অস্বাভাবিক শব্দ শোনাই হল টিনিটাস ।

এই শব্দগুলি বিভিন্ন রকমের হতে পারে যেমন বাঁশির শব্দ, বাতাসের শব্দ, নষ্ট রেডিও বা টিভির, শব্দ ঘন্টার শব্দ ইত্যাদি।যেকোনো বয়সে এই শব্দ হতে পারে। কখনো কখনো স্বল্প সময়ের জন্য, আবার কখনো বা স্থায়ীভাবে তা থেকে যেতে পারে ।তখনই রোগীর অনেক ধরনের সমস্যার সৃষ্টি হয়।

প্রকারভেদ :

টিনিটাস সাধারণত তিন ধরনের হয়।

সাবজেক্টিভ - বাইরের কোন কোলাহল ছাড়া রোগী যখন কোন শব্দ শুনতে পায়। ইহা সাধারণত একটি নির্দিষ্ট সময় পরপর অথবা একটানা শুনতে পারে ।ফলে রোগীর ঘুমাতে ও কাজে মনোনিবেশ করতে অসুবিধা হয় এবং মানসিক সমস্যার সৃষ্টি হয়।

অবজেক্টিভ - এই ধরনের টিনিটাস রোগীর নিজের শরীর থেকে অনুভূত হয়। যেমন শরীরের রক্তের প্রবাহ, মাংসপেশির সংকোচন প্রসারণ ইত্যাদির কারণে।

অডিটরি হ্যালুসিনেশন - রোগী নির্দিষ্ট সময় পরপর কানে অস্বাভাবিক শব্দ শুনতে পায় বাস্তবে যার কোন অস্তিত্ব নেই ।ব্রেনের স্নায়ু কোষ হতে উৎপন্ন এই ধরনের টিনিটাস সাধারণত মানসিক রোগীদের বেশি দেখা যায়।

টিনিটাস এর কারণ :

কারণগুলোকে সাধারণত দু'ভাগে ভাগ করা হয়

1 , কানের কারণে: কানে ময়লা বা খৈল থাকলে, কানে কোন বস্তু আটকে গেলে, মধ্যকর্ণে পানি জমলে, কানের পর্দা ফেটে গেলে, অটো স্ক্লেরোসিস বা মধ্যকর্ণের অস্থিগুলো নাড়াচাড়া করতে না পারলে, মিনিয়ার্স ডিজিজ বা অন্তঃকর্ণের চাপ বৃদ্ধি পেলে, শ্রবণ সংক্রান্ত স্নায়ু কোষ ক্ষতিগ্রস্ত হলে, শ্রবণের জন্য ক্ষতিকর ঔষধ সেবন করলে, শব্দ দূষণ জনিত কারণ, অন্তঃকর্ণের টিউমার এবং কানের আঘাতজনিত কারণে।

2 ,অন্যান্য সাধারণ কারণ: উচ্চ রক্তচাপ, রক্তশূন্যতা, মানসিক চাপ, ষাটোর্ধ্ব বয়সে এবং কিছু কিছু ভাইরাসজনিত সংক্রমণের কারণে ।

উপসর্গ

মাঝে মাঝে অথবা সব সময় কানে শো শো শব্দ শুনতে পায় ,কানে কম শুনে, মাথা ঘুরায়, কান বন্ধ বন্ধ লাগে, ঘুম কম হয় ,এককান অথবা উভয় কান আক্রান্ত হতে পারে ,ফলে দৈনন্দিন কাজকর্মের ব্যাঘাত ঘটে। মেজাজ মর্জি ঠিক রাখতে পারেনা ।এর ফলে মানসিক অবসাদ তৈরি হয়।

রোগের কারণ নির্ণয় পরীক্ষা

টিনিটাস এর কারণ নির্ণয় জন্য কানের এবং রক্তের বিভিন্ন পরীক্ষা নিরীক্ষা করা হয় যেমন- পিউরটোন অডিওমেট্রি, টিম্পানোমট্রি, এস আর টি, এক্সরে, সিটি স্ক্যান, এমআরআই, রক্তের গ্লুকোজ সহ প্রয়োজনীয় পরীক্ষা ও কান সরাসরি দেখে টিনিটাস এর কারণ নির্ণয় করা হয় ।

চিকিৎসা

এই রোগের চিকিৎসায় প্রথমে রোগীকে আশ্বস্ত করতে হয় এই বলে যে ইহা কোন জীবন সংহারী সমস্যা নয়। রোগ সম্পর্কে বিস্তারিত ধারণা দিয়ে কারণ নির্ণয় পূর্বক চিকিৎসা পদ্ধতি ও জীবন ধারণ সম্পর্কে জানাতে হয়। এ ধরনের সমস্যায় আক্রান্ত রোগীদের যে কোন কিছু দিয়ে যখন তখন কানের ময়লা পরিষ্কার করতে নিষেধ করা হয়। কানের প্রদাহ হলে অথবা পর্দা ফেটে গেলে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী যথাসময়ে চিকিৎসা নিতে হয়। কখনো কখনো কানে শোনার যন্ত্র ও টিনিটাস মাসকার ব্যবহার করতে হয়। কিছু কিছু ঔষধ প্রয়োগের মাধ্যমে টিনিটাস এর মাত্রা কমে আসে। বালিশের পাশে এলার্ম ঘড়ি অথবা হালকা শব্দের কোন মিউজিক টিনিটাস মাসকার হিসাবে কাজ করে। সর্বোপরি রিলাক্সেশন থেরাপি বা যোগ ব্যায়ামের মাধ্যমে কিছুটা উপকার পাওয়া যায়।

অধ্যাপক ডাঃ দিপঙ্কর লোধ

এমবিবিএস (ডিএমসি), এফআরসিএস (গ্লাসগো),

এফএসিএস (আমেরিকা) এফসিপিএস, ডিএলও,এমসিপিএস (ইএনটি)

অধ্যাপক ও ইউনিট প্রধান

জাতীয় নাক কান গলা ইন্সিটিটিউট

তেজগাঁও, ঢাকা।

+880 1711-832942